Description
ইসলামি রাজনৈতিক তত্ত্বে রাষ্ট্রধারণা
মুসলিম দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্র সম্পর্কে হেঁয়ালিপনার মধ্যে রয়েছে। যৎসামান্য জানাশোনা থাকলেও তা যাপিত জীবনে খুব দরকারি বলে বিবেচিত হচ্ছে না। একুশ শতকের এই বস্তুবাদী দুনিয়ায় খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই যেন একমাত্র দায়! অথচ অজ্ঞাতে রাষ্ট্র তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য অধিকারকে নিজের করে নেওয়ার কোনো তাড়না তার ভেতর নেই! উদাসীনতা নাগরিকদের একটা যন্ত্রে পরিণত করছে; যার আল্টিমেট পরিণতি- চালাক, চতুর, বুঝদার এক কায়েমি শক্তির দাসত্ব কবুল করা।
মুসলিম মানসে ইসলামি রাষ্ট্রধারণার চরম অনুপস্থিতি বিরাজমান। মুসলমানরা ঠিক জানে না, আদতে কী ধরনের রাষ্ট্র তারা নির্মাণ করতে চায়। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রতত্ত্ব বলতে মুসলমানরা ঠিক কী বোঝে, কী বোঝাতে চায় বিশ্ববাসীকে? যারা জাহেলি রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামি জীবনবোধের আলোকে নববি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে বিভোর এবং সে প্রচেষ্টায় নিজের জীবন- যৌবনের সেরাটা ঢেলে দিচ্ছে, ঠিক তারাও রাষ্ট্রচিন্তাকে আন্তরিকভাবে বোঝার কোনো তাগিদ অনুভব করছে না।
এই সংকটাবস্থায় ‘ইসলামি রাজনৈতিক তত্ত্বে রাষ্ট্রধারণা’ গ্রন্থে আধুনিক মুসলিম স্কলারদের রাষ্ট্রচিন্তাকে ঠিক তাঁদের বয়ানে তুলে ধরেছে। গ্রন্থটিতে মুসলিম চিন্তকদের জবানে উপস্থাপিত হয়েছে মুসলমাদের রাষ্ট্র, রাষ্ট্রভাবনা ও রাষ্ট্র-কাঠামো
কুরআন ও সুলতান পরস্পর সহযোগী দুটি শক্তি। একটি অপরটির প্রয়োগকে সার্থক ও শক্তিশালী করে। রাষ্ট্র ইসলামি দাওয়াহর জুতসই ক্ষেত্র তৈরি এবং ইলাহি আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কুরআনকে জীবন্ত করে তোলে। অপরদিকে কুরআন রাষ্ট্রে সুবিচার-অধিকার-শান্তি-সম্প্রীতি সুনিশ্চিত করে। এভাবেই একটি রাষ্ট্র হয়ে ওঠে দ্বীন ও দুনিয়ার অপূর্ব মোহনা। ইসলামি জীবনব্যবস্থার প্রকৃত ফল পেতে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্র্য। ইসলামি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দাওয়াহ যেখানে নিষ্ফল, রাষ্ট্র সেখানে কার্যকর উপাদান। তাই ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সক্রিয় রাজনীতির বিকল্প নেই; যদিও প্রতিষ্ঠিত ও বিরুদ্ধবাদী শক্তি এর প্রবল বিরোধিতা করে। আর তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো, বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিম যুবসমাজকে রাজনীতিবিমুখ করে পৃথিবীর নেতৃত্ব থেকে মুসলমানদের সরিয়ে রাখা। উসতাজ কারজাভি (রহ.) জীবনভর মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণে কাজ করেছেন। সেক্যুলার ও ইসলামবিরোধী শক্তির বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পারস্পরিক মতভেদ ভুলে। ইসলাম ও রাজনীতি গ্রন্থটি মূলত সে প্রচেষ্টারই বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান সন্দিহান মুসলিম যুবসমাজের জন্য এ গ্রন্থটি হতে পারে সুদৃঢ় পথনির্দেশিকা। পাশাপাশি সেক্যুলারদের সাথে চলমান বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে ইসলামপন্থিদের চিন্তা গঠনে হতে পারে এক বলিষ্ঠ দলিল।
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যক্তি ছাড়া যেমন সমাজ হয় না, তেমনই সমাজ ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। আবার একজন ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো প্রাণী নয়। বরং একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি নিজেকে নিয়ে যেভাবে ভাবেন, তেমনই ভাবেন সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়েও। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা হিসেবে মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায় নিয়ে বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাদ পড়েনি রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় জীবনও। একটি রাষ্ট্রের নীতি কী হওয়া উচিত? রাষ্ট্রপ্রধান কেমন হওয়া উচিত? রাষ্ট্রপ্রধান কী কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? কীভাবে নিতে পারেন? কোন কোন ক্ষেত্রে তা কার্যকর হবে? শুরার ব্যাপারে রাষ্ট্রপ্রধানের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত? রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আচরণ কেমন হওয়া উচিত? রাষ্ট্রপ্রধানের কোন কোন কার্যাবলি শরিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক কিংবা বিরোধমুক্ত? এসব নানা বিষয়ে ইসলামের পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা আমরা শরিয়ার দৃষ্টিতে রাষ্ট্র গ্রন্থখানি অধ্যয়নের মাধ্যমে জানতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
Reviews
There are no reviews yet.